‘ভৈরব বন্ধুসভা কীভাবে পাঠচক্র করে, কোন পটভূমিতে কী উদ্যোগ নেয়—সবই দেখি। সেদিন ফেসবুকে দেখলাম, লেখালেখিবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছে ভৈরব বন্ধুসভা। কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফিরব আমি। ভৈরবে নেমে পড়লেই অংশগ্রহণ করা যাবে। তাই এমন সুযোগ একদমই হাতছাড়া করতে চাইনি। তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। আজ কর্মশালা শেষে নিজেকে ক্লান্তিহীন মনে হচ্ছে। প্রশিক্ষকদের সাহিত্যবিষয়ক প্রতিটি কথাই যেন আমার মনে গেঁথে আছে।’
ভৈরব বন্ধুসভার উদ্যোগে লেখালেখিবিষয়ক কর্মশালা ‘শব্দের ঘরবাড়ি’তে অংশগ্রহণ করে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ আহমেদ।
ফিচার বিষয়ের প্রশিক্ষক সুমন মোল্লা বলেন, ‘তিন ভালো থাকতে হবে। হাত, মাথা ও মন। এ তিনটি বিষয় ভালো না হলে ভালো লেখা আসবে না। ফিচার হলো সংবাদ ও সাহিত্যের মাঝামাঝি রচনা। ভালো ফিচার লিখতে গেলে বেশ কিছু দিক লক্ষ রাখতে হয়। প্রথমত, শ্রুতিমধুর শিরোনাম। দ্বিতীয়ত, আকর্ষণীয় সূচনা এবং শেষে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগার সুযোগ রাখা। এক দিনে হয়তো ভালো লেখাটা আসবে না, কিন্তু নিয়মিত লেখালেখি করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।’
ভৈরব বন্ধুসভার লেখালেখিবিষয়ক কর্মশালা।
বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়ে আলোচনা করেন মতিউর রহমান সাগর। তিনি বলেন, ‘লেখকেরাই অমর হন সবচেয়ে বেশি। লেখকের এই সাফল্যের জন্য কখনো কখনো মাত্র একটি গ্রন্থই যথেষ্ট। লেখালেখির জন্য শব্দভান্ডার বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কেটলিতে চা থাকলে যেমন কাপে ঢালা সম্ভব হয়, তেমনি শব্দভান্ডার বৃদ্ধি করতে পারলে লেখালেখিতে শব্দ নিয়ে ইচ্ছেমতো খেলা করা যায়। লেখকের শব্দভান্ডার ও জ্ঞানের গভীরতা হবে অসীম।’
বাংলা ভাষার প্রাচীন গ্রন্থ চর্যাপদ থেকে শুরু করে ‘মঙ্গলকাব্য’, ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ প্রভৃতি রচনা পদ্যে রচিত। জানতে হবে ছন্দ সম্পর্কে। কোন কবিতাটি কীভাবে আবৃত্তি করতে হবে, সেটা জানা যাবে ছন্দ সম্পর্কে অবহিত থাকলে। ছন্দ তিন প্রকারের হয়। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। কবিতায় প্রতিটি চরণে এক বা একাধিক পর্ব থাকে। গল্পের রয়েছে নানা উপাদান। কাহিনি, চরিত্র, পটভূমি, দ্বন্দ্ব, বিষয়বস্তু প্রভৃতি। গল্পে মূলত কাহিনি বর্ণনা করা হয়। সংলাপ থাকে সীমিত। অপর দিকে নাটক রচনায় বর্ণনা কম থাকে। সংলাপের মাধ্যমেই বর্ণনার কাজটি হয়। নাটক হলো সংলাপনির্ভর রচনা।
বাঙালি সাহিত্যিকদের নিয়ে আলোচনা করেন শরীফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়তে হবে। কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ সাহিত্যিক একাডেমিক পড়াশোনা খুব একটা না করলেও তাঁরা এত বেশি জ্ঞানচর্চা করেছেন, যা কল্পনাতীত। তাঁদের লেখার ওপর আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি হয়। জ্ঞানচর্চা কোনো ধর্ম কিংবা সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। একজনের দ্বারা উপকৃত হবে গোটা মানবজাতি। যা ভালো, তা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। মনে মনে থাকতে হবে নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম।’
কর্মশালা শেষে নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়। আয়োজনের সহযোগী হিসেবে ছিল ‘ভৈরব উপজেলা মানবিক সংগঠন’ এবং নির্দেশক ছিলেন নাহিদ হোসাইন।